ভূত চতুর্দশী ২০২৪: ১৪টি শাক, ১৪টি প্রদীপ উৎস ও তাৎপর্য
ভূত চতুর্দশী হিন্দুদের একটি বিশেষ উৎসব যা কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। এটি মূলত পূর্বপুরুষদের স্মরণে উদযাপন করা হয়। দীপাবলির সময়কালীন এই চতুর্দশী তিথিতে, পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এই দিনে ১৪টি শাক খাওয়া এবং ১৪টি প্রদীপ জ্বালানোর বিশেষ রীতি রয়েছে।
ভূত চতুর্দশী ২০২৪ কবে?
এই বছর কালী পুজো পড়েছে ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার। সুতরাং ভূত চতুর্দশী পালন হবে ৩০ অক্টোবর, বুধবার।
ভূত চতুর্দশী কি?
ভূত চতুর্দশী হলো বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি, যা কালীপূজার আগের দিন পড়ে। সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশে এটি “নরক চতুর্দশী” নামেও পরিচিত, তবে বাংলায় এটি ভূত চতুর্দশী নামেই বিখ্যাত। এই দিনে পুরাণমতে বলা হয়, পূর্বপুরুষদের আত্মারা পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং সেই সময়ে ঘরে শান্তি এবং তাদের আত্মার মঙ্গল কামনা করতে বিশেষ আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
ভূত চতুর্দশী পালনের পেছনের উপকথা:
ভূত চতুর্দশীর প্রাচীন কাহিনিগুলি হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক গ্রন্থগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত। বলা হয়, এই দিনে মা কালী মহিষাসুর, চণ্ড ও মুন্ড নামে দুই অসুরের বধ করেন এবং ভূত প্রেতাদি অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটান। এজন্য এই দিনকে অশুভ শক্তির থেকে রক্ষা পাওয়ার দিন হিসেবে মনে করা হয়। এদিনের উপাচারগুলো মূলত আত্মীয়স্বজন ও পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাদের আত্মার মঙ্গল কামনার জন্য করা হয়।
আরও পড়ুন: ধনতেরাসে ভুলেও কিনবেন না এই সব জিনিস হবে সর্বনাশ – Dhanteras-2024
ভূত চতুর্দশীতে কেন ১৪ শাক খাওয়া হয়?
১৪ শাক খাওয়ার রীতি ভূত চতুর্দশীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আচার। এদিন ১৪ প্রকার শাক খাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। ভৌতিক বিশ্বাস অনুযায়ী, এই শাকগুলো অশুভ আত্মা এবং অপদেবতা থেকে রক্ষা করে। এই শাকগুলির মধ্যে রয়েছে: বেতো, হিঞ্চে, কালমেঘ, নিম, সরষে, পলতা, শুষনি, লাও, শুলকা, কাঁটাশাক, শেলুচ, মাষ্টা, গিমা এবং অন্য কোনো স্থানীয় শাক। শাকগুলির অ্যান্টিসেপ্টিক এবং ঔষধি গুণও রয়েছে যা শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
ধারণা করা হয়, এই শাকগুলো খাওয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে ক্ষতিকর জীবাণু বেরিয়ে যায়, যা মূলত শীতকালে সুস্থ থাকার প্রস্তুতি হিসেবে সাহায্য করে। এছাড়াও, শাকগুলির তিক্ত এবং ভেষজ গুণ মন্দ প্রভাব দূর করতে কার্যকর বলে মনে করা হয়।
কেন ভূত চতুর্দশীতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়?
১৪টি প্রদীপ জ্বালানোর রীতি ভূত চতুর্দশীর এক বিশেষ আচার। এই ১৪টি প্রদীপকে মূলত ১৪ পুরুষের আত্মার শান্তির জন্য জ্বালানো হয়। বলা হয়, এই দিনে পূর্বপুরুষের আত্মারা মর্ত্যে আগমন করেন এবং ঘরের চারপাশে প্রদীপ জ্বালানো হয় যাতে তারা পথ চিনতে পারেন এবং ঘরে প্রবেশ করতে পারেন। এছাড়াও প্রদীপের আলো অন্ধকারকে দূর করে এবং শুভ শক্তির আগমন নিশ্চিত করে বলে মনে করা হয়।
১৪ প্রদীপ জ্বালানোর আরো কিছু ব্যাখ্যা:
আত্মার পথপ্রদর্শন: এই প্রদীপগুলো মূলত পূর্বপুরুষদের আত্মাকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রজ্বালিত করা হয়, যাতে তারা আলো দেখতে পান এবং শান্তি লাভ করতে পারেন।
অশুভ শক্তির প্রভাব কমানো: প্রদীপের আলোতে ঘরের আশপাশের অন্ধকার দূর হয়, যা সব ধরনের অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে বলে বিশ্বাস করা হয়। এটি একটি প্রতীকী রীতি যা অন্ধকার থেকে আলোতে উত্তরণের কথা বলে।
প্রতীকী রীতি: ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে ১৪টি প্রেতাত্মাকে শান্ত করা হয় বলে ধরা হয়। এই আলো পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি প্রতীক।
আধুনিক যুগে ভূত চতুর্দশী উদযাপন
আধুনিককালে ভূত চতুর্দশীর এই আচার ও অনুষ্ঠানগুলি মূলত পরিবারের সকল সদস্য একসঙ্গে উদযাপন করেন। শাক রান্না করা, প্রদীপ জ্বালানো এবং পূর্বপুরুষদের স্মরণ করার মধ্যে দিয়ে পরিবারের ছোটবড় সবাই মিলে এই প্রাচীন আচার পালন করেন। এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসা একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা মানুষকে তাদের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখে।
অনেকেই এই দিনে প্রার্থনা করেন এবং নিজেদের পরিবারের কল্যাণ কামনা করেন। বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তিরা এই আচার পালন করানোর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত রাখার প্রচেষ্টা করেন।
ভূত চতুর্দশীর মাধ্যমে পারিবারিক মঙ্গল এবং ঐক্য
ভূত চতুর্দশী একদিকে যেমন অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করার উপায়, তেমনি এটি পরিবার এবং প্রিয়জনদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি উৎসবও। এই আচার ও অনুষ্ঠানগুলি আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান জানায় এবং নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখার শিক্ষা দেয়।
ভূত চতুর্দশী ২০২৪: ভূত চতুর্দশীর উৎস ও তাৎপর্য, কেন খাওয়া হয় ১৪টি শাক, কেন জ্বালানো হয় ১৪টি প্রদীপ
আচার পালনের পাশাপাশি এই দিনটি পরিবারের সবাইকে একত্রিত করে এবং সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। তাই ভূত চতুর্দশী উদযাপন শুধুমাত্র একটি আচার নয়, বরং এটি আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির একটি অংশ।